Friday, August 19, 2011

Poem - Kanchenjunga

কাঞ্চনজান্ঘা 


কথা দিয়েছিলাম. তোমাকে. 
অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলাম, তোমার কাছে 
গ্রীষ্মকালে কান্চন্জন্ঘা দেখব,
বরফ ভেজা রাস্তা দিয়ে, পা টিপে টিপে,
আমাদের অলিখিত চুক্তি. 
তোমাকে একখানি শোএটার কিনে দিয়েছিলাম
গড়িয়াহাট এর মোড় থেকে. 
নরম, ঠিক তোমার গালের মত. 
দুগ্গা পুজোর ঠিক পরে, 
মিনি বাস চেপে, তুমি ঘুমিয়ে পরেছিলে 
আমার কাঁধে মাথা রেখে, 
ঝাকুনি তোমাকে উঠিয়ে দিল.

কত বছর কেটে গেছে, 
ট্রেন চেপে আমাদের রওনা 
বাকি রয়ে গেল. 
সেই বার খোকার জর হলো,
তোলপার জীবন, ওষুধ, ডাক্তার.
জমানো টাকা সেই সব, 
খরচার কত রুপ. কুত্ছিত খরচা.
তারপর, কত বার, 
চেষ্টা, বৃথা প্রচেষ্টা. 
চাল, ডাল, বাড়ি ভাড়া, 
সংসার ধর্ম, রোজকার রোজগার!
নিঃশব্দ তোমার আকুতি, 
অসীম তোমার ধৈর্য 
কান্চনজন্গার মত প্রশান্ত 
প্রতিবাদহীন, জীবন. 


তোমার চশমাটা, আমার খাটের পাশে 
খোকা রেখে গেল
বলল, ওরা ফেরত দিয়েছে, 
আমি মুছে রাখলাম, 
বালিশের গায়ে এখনো 
তোমার গায়ের গন্ধ.
ইস্ত্রী করা তোমার তাঁতের সাড়ী,
আলনার ধরে, রেখে গেছো, 
গায়ের গন্ধ মেশানো স্মৃতি. 


ডায়রি টা, টেবিলের কনে, 
২৩ শে বৈশাখ, টিকিটের গায়ে তারিক 
ঝাপসা হয়ে গেছে,
আরও ঝাপসা,
ঘোলাটে স্মৃতি গুলো টাটকা হয়ে উঠলো,
তোমার শরীরটা, আজ 
কান্চন্জন্ঘার মত শীতল,
উষ্ণতা ফেলে গেলে, 
বিছানার এক পাশ, শুন্য 
আমার নতুন সঙ্গী 
একাকিত্ব. 


খোকারা এবার শিমলা যাবে, 
অফ্ফিস থেকে ছুটি নিয়েছে, 
ফিরে এসেছে তোমার 'কাজ' 
কান্সেল করতে পারবে না, অনেক টাকার ব্যাপার 
আমিই বললাম, 
ঘুরে আয়ে, কথা দিয়েছিস যখন. 


তোমার ডাইরি তে রাখা ছিল
টিকিটটা. আজ দেখলাম, 
শেষ মুহুর্তে কাটা টিকিট,
তরিঘরি, সুটকেসে তোমার চাদর 
দুরবিন, ক্যামেরা, ওষুধ 
তুমি একটা ফ্লাস্ক কিনেছিলে,
টাইগার হীল দেখতে দেখতে,
গরম চা, চুমুক. 


ওয়েটিং লিস্ট এ আমাদের নাম. 
তুমি কান্সেল করনি? 
আমি জানতাম না,
হয়ত ওয়েটিং লিস্ট থেকে
নামটা নির্ধারিত সিট পেয়েছিল. 
হয়ত অন্য কেউ গিয়েছিল সেই দিন. 
সূর্যোদয় দেখেছিল  
বরফ ভেজা রাস্তা দিয়ে, স্মৃতিগুলো হেঁটে চলেছে 
থেমে নেই কিছুই, 
ঘড়ি, নিশ্বাস, স্বপ্ন.
থেমে থাকেনা কিছুই
টিকিট থেকে আজ তোমার নাম টা
কেটে দিলাম,
এখন টিকিটের গায়ে লেখা,
আমার নাম, 
ওয়েটিং লিস্ট -এ!

No comments:

Post a Comment

Photo Gallery

Photo Gallery